সারাদিন পড়াশোনা করার উপায়: মনোযোগ ধরে রাখার কিছু কার্যকর কৌশল

পড়াশোনায় ভালো ফলাফল পেতে হলে নিয়মিত দীর্ঘ সময় পড়াশোনা করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীই বলেন, সারাদিন পড়াশোনা করা সম্ভব হয় না, মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় অথবা বসে থাকলেও মন পড়ায় থাকে না। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে আজকে আমরা জানবো সারাদিন পড়াশোনা করার উপায় ও কিছু বাস্তব পরীক্ষিত কৌশল যা আপনাকে দীর্ঘ সময় পড়াশোনায়  মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করবে।

পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসা তৈরী করুন

সারাদিন পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পড়াশোনাকে ভালোবাসা। আমি আবারো বলছি, এটি হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

আচ্ছা একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন তো, আপনি যেই কাজটা করতে ভালোবাসেন সেই কাজটা দীর্ঘ সময় করতে কি আপনার কখনো বিরক্ত লাগে? খেলাধুলা করা, ঘন্টার পর ঘন্টা সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি কাজ যখন আমরা করি তখন আমাদের বিরক্ত লাগে না। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে আমরা এসব করে আনন্দ পাই। অন্যভাবে বললে আমরা এসব ভালোবেসে করি।

একইভাবে যদি আমাদের কাছে পড়াশোনা করতে ভালো লাগতো, আনন্দ পেতাম ও ভালোবাসতাম, তবে ঘন্টার পর ঘন্টা পড়তেও আমাদের কখনো বিরক্ত লাগতো না।  

যেভাবে পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসা তৈরী করবেন

পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসা তৈরি করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- বুঝে পড়া।  আপনি যদি বুঝে না পড়ে শুধু তোতাপাখির মতো মুখস্ত করে যান, তবে আপনার কাছে পড়াশোনাকে বিরক্তিকর ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না। আপনি যখন কোনোকিছু বুঝে পড়েন তখন আপনার কাছে সেই বিষয় সম্পর্কে আরো বেশি জানার কৌতূহল তৈরী হয়। যার ফলে আপনি আরো বেশি করে পড়তে থাকেন। একইসাথে বুঝে পড়লে আপনার মস্তিষ্কে সেই পড়া মনে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

সারাদিন পড়াশোনা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন

আপনি হঠাৎ কোনো একদিন চাইলেই সারাদিন পড়াশোনা করতে পারবেন না। কারণ- আমাদের মস্তিস্ক সবসময় আমাদেরকে দিয়ে আমাদের অভ্যাসগত কাজগুলো করায়। আর এই অভ্যাস পরিবর্তন একদিনে সম্ভব হয় না।  তাই ধীরে ধীরে আপনাকে অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। এর জন্য আপনাকে সব ধরণের অপ্রয়োজনীয় কাজগুলো বাদ দিয়ে সেই সময়গুলোতে পড়াশোনা করতে হবে। 

এই ক্ষেত্রে অনেক ভালো একটা পদ্ধতি হচ্ছে সব ধরণের নেগেটিভ সিগনাল (যেগুলো আপনাকে অপ্রয়োজনীয় কাজ করতে নিয়ে যায়) বন্ধ করে দিতে হবে। যেমন- ফোনের সব ধরণের নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখা, ফোন সাইলেন্ট করে পড়াশোনার স্থান থেকে অনেক দূরে রাখা ইত্যাদি। এভাবে প্রথম সপ্তাহ একটু কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে আপনার কাছে পড়াশোনাক ভালো লাগতে শুরু করবে। আপনি দীর্ঘ সময় পড়াশোনা করতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন ইনশা আল্লাহ। 

আরো জানুন: বই পড়ার অভ্যাস কমে যাওয়ার কারণ এবং সমাধান

পড়ার পরিবেশ ঠিক রাখুন

আপনার পড়ার টেবিলটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও গুছানো থাকা উচিত। এমন স্থানে পড়াশোনা করুন যেখানে কেউ আপনাকে বিরক্ত করবে না এবং মনোযোগ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা একদম কমে যাবে। এমন একটি পরিবেশ তৈরী করুন যেখানে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা যায়। 

পোমোডোরো টেকনিক ব্যবহার করুন

আমাদের সচেতন মন একটানা দীর্ঘ সময় কোনো কিছুতে মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। কিছুক্ষন পর পর আমাদের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা পোমোডোরো টেকনিক ব্যবহার করতে পারি। পোমোডোরো একটি জনপ্রিয় সময় ব্যবস্থাপনা কৌশল, যেখানে আপনি ২৫ মিনিট মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেন, তারপর ৫ মিনিট বিশ্রাম নেন। এভাবে ৪টি সেশন শেষ হলে, ৩০ মিনিটের একটি দীর্ঘ বিরতি নেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রেখে পড়াশোনার জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি।

তবে মনে রাখা জরুরি যে, বিশ্রামের সময় কোনো মতেই সোশ্যাল মিডিয়াতে যাওয়া যাবে না। 

স্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি গ্রহণ করুন

সারাদিন পড়াশোনা করতে চাইলে শরীর ও মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অসুস্থ শরীর নিয়ে সারাদিন পড়াশোনা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বেশি তেল-মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ সেগুলো ক্লান্তি বাড়ায়। পর্যাপ্ত পরিমান বিশুদ্ধ পানি পান করুন এবং মাঝে মাঝে ফল খান।

শরীরচর্চা বা হালকা হাঁটাহাঁটি করুন

অনেকক্ষণ একটানা বসে থাকলে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায় এবং মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। তাই পড়ার বিরতিতে ৫-১০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করলে শরীর ফুরফুরে থাকে ও মন সতেজ হয়।

সারাদিন পড়াশোনা করতে ঘুম ঠিক রাখুন

রাত জেগে পড়াশোনা করলে পরদিন আপনি সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়বেন, ফলে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। সারাদিন পড়াশোনা করতে চাইলে রাতের ঘুম অবশ্যই ৬-৮ ঘণ্টা নিশ্চিত করুন। পাশাপাশি দুপুরে ২০-৩০ মিনিটের একটি পাওয়ার ন্যাপ নিলে মস্তিষ্ক আরও সতেজ থাকবে এবং পড়ায় ফোকাস বাড়বে।

একসঙ্গে একাধিক কাজ বাদ দিন

অনেকেই পড়ার সময় মোবাইলে মেসেজ চেক করেন, গান শুনেন বা অন্য কিছু করতে থাকেন। কিন্তু এতে মনোযোগ নষ্ট হয়, আর পড়াটা ঠিকভাবে হয় না।

মানুষের সচেতন মন এক সাথে একাধিক কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। যখন আমরা একসাথে একাধিক কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করি তখন আমাদের সচেতন মন এক কাজ থেকে দ্রুত সময়ে অন্য কাজে মনোযোগকে শিফট করে। যার ফলে কোনোটিতেই সঠিকভাবে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *